মঙ্গলবার, ১৯ অগাস্ট ২০২৫, ০২:২৫ পূর্বাহ্ন

জেলেনস্কি চাইলেই যুদ্ধ বন্ধ করতে পারেন: ট্রাম্প

আলাস্কায় যাওয়ার পথে এয়ার ফোর্স ওয়ানে ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: এপি।

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, একুশের কণ্ঠ:: ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি চাইলে মুহূর্তের মধ্যেই যুদ্ধ বন্ধ করতে পারেন। তবে এজন্য ক্রিমিয়া ফেরত পাওয়ার আশা ও পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোতে যোগদানের স্বপ্ন ত্যাগ করতে হবে বলে জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

রোববার (১৭ আগস্ট) নিজের মালিকানাধীন ট্রুথ সোশ্যালে দেওয়া এক পোস্টে তিনি এ মন্তব্য করেন। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ খবর জানিয়েছে।

পোস্টে ট্রাম্প লেখেন, প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি চাইলে মুহূর্তের মধ্যেই রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ শেষ করতে পারেন, অথবা লড়াই চালিয়ে যেতে পারেন।’ ওবামার আমলে হারানো ক্রিমিয়া আর ফেরত পাওয়া যাবে না, আর ইউক্রেনের ন্যাটোতে যোগ দেওয়াও সম্ভব নয়। কিছু জিনিস কখনোই বদলায় না!’

২০২২ সালে পূর্ণমাত্রার আগ্রাসন চালানোর আট বছর আগে, ২০১৪ সালে বেআইনিভাবে ক্রিমিয়া উপদ্বীপের দখল করেছিল মস্কো।

আলাস্কায় রুশ নেতা ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে বৈঠকের পর এমন মন্তব্য করলেন ট্রাম্প। বৈঠকে যুদ্ধবিরতির দাবি বাদ দিয়ে পরিবর্তে একটি স্থায়ী শান্তি চুক্তির আহ্বান জানান তিনি।

সোমবার ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ও ইউরোপীয় নেতাদের সঙ্গে হোয়াইট হাউজে এক বৈঠক করার কথা রয়েছে ট্রাম্পের। তার আগেই জেলেনস্কির ওপর চাপ সৃষ্টি করলেন তিনি।

বৈঠক উপলক্ষে রবিবার রাতে যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছানোর পর, জেলেনস্কি আবারও মিত্রদের কাছ থেকে কার্যকর নিরাপত্তা নিশ্চয়তার আহ্বান জানান। ন্যাটো মহাসচিব মার্ক রুথ, যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ার স্টারমারসহ ইউরোপীয় নেতারা সোমবার ওয়াশিংটনে ইউক্রেনের ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনা করতে জেলেনস্কির সঙ্গে যোগ দেবেন। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি, জার্মানির চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মার্জ, ফিনল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার স্টাব এবং ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন ডার লায়েন উপস্থিত থাকবেন। তাদের মধ্যে কতজন হোয়াইট হাউজে যাবেন তা এখনও স্পষ্ট নয়।

এক মার্কিন দূত রবিবার বলেন যে পুতিন ইউক্রেনের জন্য ন্যাটোর মতো একটি নিরাপত্তা চুক্তিতে সম্মত হয়েছেন। তবে রুশ প্রেসিডেন্ট ধারাবাহিকভাবে ইউক্রেনের সামরিক জোটে যোগদানের বিরোধিতা করে আসছেন।

পোস্টে ট্রাম্প পরে আরও লেখেন, আগামীকাল হোয়াইট হাউজে বড় দিন। এত ইউরোপীয় নেতা একসাথে আগে কখনো আসেননি। তাদের আতিথ্য দেওয়া আমার জন্য দারুণ সম্মানের ব্যাপার!

জেলেনস্কি সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করে ট্রাম্পের আমন্ত্রণের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। বলেন, আমরা সবাই দ্রুত ও নির্ভরযোগ্যভাবে এই যুদ্ধ শেষ করতে চাই।

এত অল্প সময়ের নোটিশে এতগুলো রাষ্ট্রপ্রধানের আটলান্টিক পাড়ি দিয়ে মূলত একটি যুদ্ধকালীন সংকট বৈঠকে যোগ দেওয়া আধুনিক যুগে নজিরবিহীন বলে মনে হচ্ছে, যা ঝুঁকির ভয়াবহতা নির্দেশ করছে।

কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, ইউরোপীয় কর্মকর্তারা উদ্বিগ্ন যে ট্রাম্প জেলেনস্কিকে শর্ত মেনে নিতে চাপ দিতে পারেন। যেহেতু ইউক্রেনীয় নেতাকে গত শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে অনুষ্ঠিত ট্রাম্প-পুতিন বৈঠক থেকে বাদ দেওয়া হয়েছিল।

কিন্তু মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বিবিসির অংশীদার সিবিএসকে বলেন, জেলেনস্কিকে ট্রাম্প জোর করে শান্তিচুক্তি মেনে নিতে বাধ্য করবেন—এমন ধারণা ‘মিডিয়ার তৈরি কাহিনি’।

ন্যাটো নেতারাও চান ফেব্রুয়ারির মতো ঘটনার পুনরাবৃত্তি এড়াতে। ওই বৈঠকে ট্রাম্প ও মার্কিন ভাইস-প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্সের সঙ্গে তীব্র তর্কাতর্কির পর জেলেনস্কির হোয়াইট হাউজ সফর হঠাৎ করে শেষ হয়। সেই বিরোধে ট্রাম্প জেলেনস্কিকে অভিযুক্ত করেছিলেন, যা ওয়াশিংটন-কিয়েভ সম্পর্ককে ভেঙে দিয়েছিল।

কিন্তু তখন থেকে ইউরোপীয় নেতারা নেপথ্যে সম্পর্ক মেরামতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। ইউক্রেনীয় নেতাকে কোচিং দেওয়া হয়েছে যেন তিনি ‘চুক্তি করার ভাষায়’ কথা বলেন—যা ট্রাম্পের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ।

সংবাদটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2024  Ekusharkantho.com
Technical Helped by Curlhost.com